,

দরিদ্র বলে আমাদের কেউ যেন অবহেলা করতে না পারে: প্রধানমন্ত্রী

রোববার জাতীয় সমবায় পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিডিনিউজ ১০ ডটকম ডেস্ক: দেশব্যাপী সমবায় আন্দোলনকে জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে সমবায় একটি পরীক্ষিত কৌশল। তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ আন্দোলনকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা দারিদ্র্যের হার ২১ ভাগে নামিয়ে এনেছি এবং আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আরও ৪ থেকে ৫ ভাগ দারিদ্র্য আমরা বিমোচন করতে চাই। যাতে বাংলাদেশকে দরিদ্র বলে আর কেউ অবহেলা করতে না পারে, করুণা করতে না পারে।

রোববার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৪৭তম জাতীয় সমবায় দিবস এবং জাতীয় সমবায় পুরস্কার ২০১৬ এবং ২০১৭ বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সমবায় বিভাগ আয়োজিত সমবায় পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে ১০টি ক্যাটাগরিতে সমবায়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় দু’বছরে ২০ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে পদক দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে তারা পদক গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে এলজিআরডি এবং সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মো. কামাল উদ্দিন তালুকদার।

সমবায়ভিত্তিক কৃষির ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকাল সবাই লেখাপড়া শিখে চাকরি করে, বিদেশে চলে যায়। অথচ জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ করতে হবে। একমাত্র সমবায়ের মাধ্যমে দ্রুত উন্নয়ন করা সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কারণে জাতির পিতা সমবায়কে আমাদের সংবিধানের অর্থনৈতিক নীতিমালায় সংযুক্ত করে গেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সমবায় ছিল জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পূরণের হাতিয়ার। তিনি কৃষি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, শিল্প উদ্যোগ, কৃষি ঋণসহ সব ক্ষেত্রেই সমবায়ভিত্তিক উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থাপনা প্রসারিত করতে চেয়েছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, আজ বাংলাদেশের অন্যতম সমবায়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটা জাতির পিতার হাতেই গড়া।

গ্রামীণ জনপদ থেকে দারিদ্র্য নির্মূলের লক্ষ্যে ৮১২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় ৮৭ হাজার গ্রামে ৮২ হাজার ৩৯৫টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠিত হয়েছে। উপকারভোগী সদস্য পরিবার ৩৮ লাখ ৮১ হাজার ২৪০। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও ঋণ সুবিধা নিয়ে এ প্রকল্পের উপকারভোগীরা ক্রমান্বয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। কৃষিভিত্তিক গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে তার সরকার ক্ষমতায় আসার পর কৃষিভিত্তিক গবেষণায় গুরুত্ব দিয়েছিল বলেই তার সুফল আজকে দেশবাসী পাচ্ছে, বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।

বাংলাদেশ বর্তমানে মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়, তরিতরকারি উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ, ফলমূল উৎপাদনে চতুর্থ এবং আলু উৎপাদনে বিশ্বে অষ্টম স্থান অধিকার করে আছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। দেশে অধিক হারে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলার ওপরও গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, উৎপাদিত খাদ্যশস্যকে উৎপাদনের পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে বাজারজাতকরণের সুবিধা হবে আবার বিদেশে পাঠানো যাবে। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।

দেশের মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা এবং ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সমগ্র বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ জায়গায় তার সরকার ব্রডব্যান্ড দিতে সক্ষম হওয়ায় আজকাল অনলাইনেই কেনাকাটা হচ্ছে। তিনি বলেন, তার সরকার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে এর মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাজার খোঁজা, বাজার করা, নতুন পণ্য তৈরি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যেরও অনেক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করবে।

সমবায়ের সাহায্যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী তৈরি সময়ের দাবি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ফলে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে দেশের মানুষ মুক্তি পাবে এবং আমাদের আর্থ-সামাজিক আরও উন্নতি হবে। তিনি বলেন, উন্নয়নের যে ধারাটা আজকে আমরা সৃষ্টি করেছি সেই ধারাটা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলব, জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা পূরণ করব। এটাই আমাদের লক্ষ্য।

-বাসস

এই বিভাগের আরও খবর